গুম হওয়া শহর

এই শহরটা একটা জমাট বাঁধা চিৎকার।
অকটেনের পোড়া গন্ধে অক্সিজেন কোনঠাসা।
ফুসফুসের লোহিতরা, আতংকিত, বিচ্ছিন্ন।
দুর্বার কংক্রিটের দখলে আজ-
ম্রিয়মাণ সবুজের চিহ্ন।
নষ্ট দুর্নিতির সার, পিচ গলা কালো তেল হয়ে,
চুইয়ে গেছে সড়কের শেকড়ে,
মহা উৎসবে অনির্বার।
আর উর্ধগতি উন্নয়নে পতিশ্রুতির শীৎকার।
এই শহর একটা আতংকিত চিৎকার।

এই শহর একটা কপিরাইটের গানের মতো।
ভান ধরা এক কসমোপলিটান-
মুমুর্ষ আর রুগ্ন কলতান,
ভিনদেশী কাপড় গায়ে দিয়ে,
আমরা সবাই দৌড়ানোরত।
রড সিমেন্টের উঁচু পিলার পোঁতা বুকে,
ধেয়ে যায়, ধেয়ে আসে দুঃখে।
সরীসৃপ মেট্রোর ঝিলিক অবিরত।
আর পরিত্যাক্ত পদসেতুর সিড়ি ধরে,
মধ্যরাতের অথর্ব আশ্রয় যত।
তাঁরা পরিবারহীন অনুর্বর-
দেখেছে পেঁচার চোখে,
আহত পূর্ণিমার ক্ষত।
কেউ কি জানে?
এই শহরে ঘরে ঘরে সহস্র প্রেমিক আহত?

এই শহরটা একটা গুম হওয়া বোবার শহর।
ঝাঁকে ঝাঁকে পোনা জনতার ভিড়ে,
রচিত হয় প্রতিদিনের গুপ্ত লহর।
চুরি করে করে, লঞ্চের কার্নিশে বসে,
বহুদিন হারিয়ে ফেলেছি আমার স্বপ্ন গুলো।
উড়ে যাওয়া দিবা চিল, আর-
সান্ধ্যকালিন ডাহুক।
লোডশেডিঙয়ের ঘন অন্ধকারে,
যায়না কোথাও যেনো,
অভাগা এই শহরেই থাকুক।
নতুন পুরাতন সব মানুষের মাঝে,
গর্জে উঠুক নতুন রক্তের বহর।
এই গোটা শহরটাই একটা কানা ঘরের কবর।

এই শহর কিছু পালিয়ে যাওয়া বন্ধুর।
আমার কৈশরে যারা যৌবন এনে দিলো।
বৃষ্টির জলে তাঁরা নোনা স্বাদ দিয়েছিলো।
তাপদাহে স্নানরত সবুজের মাঠে,
কুয়াশা ছেড়ে শিউলির সন্ধ্যা কাটে।
দূর বিপণীর মাইকে বাজে আয়ুব বাচ্চুর গান।
ঘর্মাক্ত স্নো, ঘর্মাক্ত পাউডারের সুঘ্রাণ।
ঈদের আনন্দ চাপাচাপিতে,
বয়ঃসন্ধির বান।
ব্যাগে ব্যাগে ভর্তি গন্ধ নতুন জামার।
সৃতির সেল্যুলয়েডে শহুরে বন্ধুরা আমার-
মনে পড়ে যতদুর।
কোথায় আমার সেই শহর ভর্তি রোদ্দুর?
এই শহর, না ফেরার দেশে চলে যাওয়া কিছু বন্ধুর।

এই শহরটার কোথাও কেউ নেই।
রুমাল ঝুলানো নায়কেরা আর কথা রাখে না।
রঙিন নায়িকারাও টিকটকে ভ্যাবসা হয়ে আছে।
পোস্টারে নেই বিনোদন।
সিনেমা হল গুলো ইউটিউবে ঢুকে গেছে।
অভিনেতারা জারজ রাজনীতির টোপে।
মুখ ঢেকেছে-
বিদেশী মেকাপের ছোপে ছোপে।
হয়ে গেছে মন ভাঙ্গার মেশিন একেক জন।
চেনা যায় ফুরালেই প্রয়োজন।
আর আমি যেই ছিলাম,
এখনো অপেক্ষায়রত সেই।
শুধু শহরটাই আমাদের মতো নেই।